ভোলার না যাওয়া কক্সবাজারের এক ভোর
কক্সবাজার—দিগন্তজোড়া সমুদ্র, অবিরাম ঢেউ আর বালুর রাজ্য। তবে সেদিনের ভোরটা ছিল একদম আলাদা, যেন প্রকৃতি নিজ হাতে এঁকেছিল এক অনন্য চিত্রপট।
রাতভর সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে ঘুমিয়েছিলাম। ভোর হতে না হতেই চোখ খুলে গেল—হয়তো সমুদ্রের ডাকেই। ঘুম ভাঙতেই হালকা ঠান্ডা হাওয়া জানালার পর্দা দুলিয়ে দিচ্ছিল। বাইরে তাকিয়ে দেখি, আকাশের পূর্বদিকে লালচে আভা, যেন সূর্য লুকোচুরি খেলছে সাগরের সাথে।
চুপিচুপি সবাইকে না জাগিয়ে আমি বেরিয়ে পড়লাম সৈকতের দিকে। পায়ে হেঁটে বালুর ওপর চলছিলাম—নরম, ঠান্ডা বালুর অনুভূতি যেন মনকেও ঠান্ডা করে দিল। তখন সৈকত প্রায় ফাঁকা। কেবল কয়েকজন জেলে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আর দূরে একজোড়া তরুণ-তরুণী হাতে হাত রেখে হেঁটে যাচ্ছে।
তারপরই আসল দৃশ্যটা। হঠাৎ করেই সূর্য যেন জলে ঝাঁপ দিল! সমুদ্রের জল যেন সোনার মত ঝলমল করতে লাগল। সূর্যের আলো ঢেউয়ের গায়ে গায়ে খেলে যেতে লাগল, যেন প্রতিটি ঢেউ বলছে, “শুভ সকাল!”
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম একমনে। মোবাইল তোলা হলো না, ছবি তোলা হলো না—কেননা ক্যামেরা কি ধরে রাখতে পারে এমন একটা মুহূর্ত? ওই সময়টা শুধু চোখ আর হৃদয়ে মেখে নিতে চেয়েছিলাম।
একজন বৃদ্ধ জেলে হেসে বললেন, “প্রতিদিন এই দৃশ্য দেখি, কিন্তু প্রতিদিন নতুন লাগে।” কথাটা সত্যি—প্রকৃতির সৌন্দর্য কখনো পুরোনো হয় না।
ফিরে এসে সবাইকে বললাম, “তোমরা ঘুমিয়েছিলে, কিন্তু আমি একটুকরো স্বর্গ দেখে এলাম।”
সেই ভোর, সেই আলো, সেই সাগরের ঢেউ—আজও চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ে। সত্যিই, ভোলার না যাওয়া কক্সবাজারের এক ভোর।
0 Comments