ছাদবাগানের প্রেম
(একটি ছোট প্রেমের গল্প)
ঢাকার এক পুরনো বাসার চতুর্থ তলার ছাদটা যেন ছোট এক টুকরো স্বর্গ। টবে টবে সাজানো গাঁদা, জিনিয়া, টমেটো, লাউয়ের লতা—সবুজে ঘেরা সেই ছাদই ছিল নীলয়ের নেশার জায়গা। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বিকেলটা ও কাটাত ছাদে, গাছে পানি দিত, পাখিদের ডাক শুনত, আর বই পড়ত।
তবে একদিন থেকে সব বদলে গেল।
সেদিন হঠাৎ করেই পাশের ছাদের দেয়ালের ওপাশে দেখা গেল একটি মেয়েকে—মাথায় স্কার্ফ বাঁধা, হাতে ঝাড়ু, কিন্তু চোখে একরাশ কৌতূহল। চোখে চোখ পড়তেই মেয়েটি হেসে ফেলল। নীলয়ের বুক ধুকপুক করে উঠল।
পরদিন, নীলয় টবে পানি দিতে দিতে বলল,
— “আপনার বাগান খুব সুন্দর।”
মেয়েটি হেসে জবাব দিল,
— “আপনারটাও কম না! আপনার টমেটো কিন্তু আমার ছাদেও ঢুকেছে!”
সেই শুরু। প্রতিদিন বিকেলে তাদের দেখা হত, দেয়ালের দুই পাশে। কথা হত গাছ নিয়ে, মাটি নিয়ে, বৃষ্টি নিয়ে… ধীরে ধীরে গাছের ফাঁকে গজিয়ে উঠল এক নতুন সম্পর্ক—বন্ধুত্ব, আর তার পরে প্রেম।
একদিন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নীলয় দেয়ালের ওপাশে একটা চিরকুট ছুড়ে দিল—
“তুমি কি চাও, আমাদের ছাদ এক হোক? শুধু গাছ দিয়ে না, হৃদয় দিয়েও?”
ওপাশ থেকে এল উত্তর, একটা ছোট্ট পলিথিনে মোড়ানো গোলাপ আর চিরকুটে লেখা—
“হ্যাঁ। ছাদের মতো, আমিও তোমার হতে চাই।”
ছাদবাগানটা আজও আছে। শুধু দেয়ালটা নেই। দুই ছাদের মাঝে এখন একটা কাঠের ছোট ব্রিজ, আর তাতে ঝুলে থাকা বেলির মালা। দুই হৃদয়ের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই।
0 Comments