গল্প: সেই পাহাড়ের রাতে


গল্প: সেই পাহাড়ের রাতে

শীতের এক সন্ধ্যা। পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট একটা গ্রাম – নাম ঝরনাটিলা। প্রকৃতি যেন এখানে নিঃশব্দে কথা বলে। চারদিকে কুয়াশা, পাখিদের ডাকও কেমন যেন মেঘে মিশে গেছে। গ্রামের একমাত্র স্কুলশিক্ষক রুদ্র প্রতি সপ্তাহে একবার শহরে যান বাজার করতে, আবার রাতে ফিরে আসেন।

সেই রাতে আকাশটা ছিল অস্বাভাবিক শান্ত। রুদ্র বাজার শেষ করে পাহাড়ি পথ ধরে ফিরছিলেন। হঠাৎ করেই চারপাশে নেমে এলো ঘন কুয়াশা, চোখের সামনেও কিছু দেখা যায় না। পথ চেনা, তবুও সেই রাতে সবকিছু যেন নতুন মনে হচ্ছিল।

চলার মাঝে হঠাৎ একটা শব্দ—
টিক... টিক... টিক...

রুদ্র থেমে গেলেন। শব্দটা যেন পাশের গাছের ভেতর থেকে আসছে। সাহস করে এগিয়ে গেলেন। হঠাৎ একটা মৃদু আলো দেখতে পেলেন। একটা ছোট মেয়ে, তার বয়স বড়জোর ১০, পরনে ময়লা জামা, হাতে একটা পুরোনো টর্চ লাইট। সে নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে।

— “তুমি একা এখানে?”
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল, “না, আমার ভাই হারিয়ে গেছে। আমি তাকে খুঁজতে বেরিয়েছি।”

রুদ্র হতবাক। এতো রাতে, এই পাহাড়ি পথে একটা ছোট মেয়ে!
— “তোমার বাড়ি কোথায়?”
— “আমার বাড়ি তো ওই ওপারের গাছের নিচে। মা বলে ওটা আমাদের ‘বাড়ির ছায়া’।”

রুদ্র বুঝতে পারছিলেন না মেয়েটার কথাগুলোর মানে কী। তবুও বললেন, “চলো, তোমায় তোমার বাড়ি পৌঁছে দিই।”

মেয়েটা হঠাৎ বলল,
— “আপনি যখন কাল সকালে ফিরবেন, ওই গাছটার নিচে একটা ছোট কবর দেখবেন। ওটাই আমার আর ভাইয়ের বাড়ি ছিল... এখন শুধু ভাই একা থাকে... আমি আজ শেষবার দেখতে এসেছি।”

রুদ্র চোখের পলকে যেন সবকিছু হারিয়ে ফেললেন। সামনে তাকালেন, মেয়েটা নেই। কুয়াশার মধ্যে শুধু সেই পুরোনো টর্চ লাইটটা পড়ে আছে।

পরদিন সকালবেলা রুদ্র গ্রামে ফিরে গিয়ে কবরস্থানে খোঁজ নিলেন। সত্যিই, একটা ছোট কবর... পাশে একটা পুরোনো পাথরের ফলকে লেখা:
"রিয়া ও রাজু – দুই ভাইবোন, চিরকাল একসাথে।"

রুদ্র কেবল কুয়াশার দিকে তাকিয়ে রইলেন। সেই পাহাড়ের রাত তার কাছে এখন আর শুধু ভয় নয় – এক রহস্য, এক ভালোবাসা, এক অনন্ত শীতল স্পর্শ...


Post a Comment

0 Comments