নির্বাক প্রতিবাদ (একটি ছোটগল্প)

 

নির্বাক প্রতিবাদ (একটি ছোটগল্প) রেলস্টেশনের পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানটায় প্রতিদিনের মতোই ভিড় জমেছে। অফিসগামী মানুষ, কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণী, কিছু বেকার যুবক—চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেশ, রাজনীতি, ক্রিকেট আর সিনেমা নিয়ে তর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই দোকানের পাশের রাস্তায় একটি ঘটনা ঘটে। একজন বয়স্ক পথশ্রমিক, যিনি রাস্তার ধারে বসে কলা বিক্রি করতেন, তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় এক গার্মেন্টস অফিসার। কারণ? “দেখতে খারাপ লাগছে” বলে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে! লোকটা পড়ে যায়, তার কলার ঝুড়ি ছড়িয়ে পড়ে। কিছু কলা গড়াতে গড়াতে ড্রেনের কাছে চলে যায়। চায়ের দোকানে থাকা মানুষগুলো মুহূর্তের জন্য থেমে যায়। কেউ কেউ দেখে, কেউ কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয়। একজন যুবক ফিসফিস করে বলে, “বুঝলে! প্রশাসনের লোকেদের কিছু বললেই উল্টো বিপদ!” কেউ এগিয়ে যায় না। তবে সবার অলক্ষ্যে, এক কলেজপড়ুয়া মেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। শব্দ না করে, কিছু না বলে বৃদ্ধ লোকটাকে ধীরে ধীরে তুলে দাঁড় করায়। তারপর মাটিতে ছড়িয়ে থাকা কলাগুলো কুড়িয়ে আবার ঝুড়িতে ভরে দেয়। শেষে তার ব্যাগ থেকে একটা ছোট পানির বোতল বের করে বৃদ্ধের হাতে দেয়। তখনো মেয়েটির মুখে কোনো শব্দ নেই। কেবল চোখে এক অনাড়ম্বর প্রতিবাদ। লোকগুলো চুপ করে থাকে। দোকানের রেডিওতে তখন চলছে কোনো পুরনো রবীন্দ্রসঙ্গীত— "আমার চোখে দেখেছি যাহা, আমি চুপ করে আছি তাহা..." সে দিনের পর থেকে সেই মেয়েটিকে সবাই মনে রাখে। নাম জানে না কেউ, কথা শোনেনি কেউ। তবু তার নির্বাক প্রতিবাদ প্রতিদিন নতুন কোনো সাহস জোগায় চায়ের দোকানে বসে থাকা মানুষের মনে।

Post a Comment

0 Comments